কক্সবাজারের টেকনাফ থা'না পু'লিশের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ'কুমার দাসের সাজানো মা'মলায় দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন কারা'ভোগের পর বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্ত হন দৈনিক জনতার বাণীর সম্পাদক কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান।
তিনি মূলত টেকনাফের আলোচিত ওসি প্রদীপ'কুমার দাসের রোষানলের শিকার হয়েছিলেন। বর্ত'মানে তিনি কক্সবাজার সদর হাস'পাতালে চি'কিৎসা নিচ্ছেন।
কারা'মুক্ত হওয়ার পর ওসি প্রদীপ কর্তৃক লোমহর্ষক নি'র্যাতনের বর্ণনা দেন সাং'বাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। তিনি একটি অনলাইনে ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, টেকনাফের ওসি'প্রদীপের সঙ্গে আমার ব্যক্তি'গত কোনো বি'রোধ ছিল না। আমি দুই দশক ধরে সাংবাদিকতা করছি। তার আগে আরো অনেকে টেকনাফের ওসি ছিল। সবার সঙ্গেই পেশাগত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
ওসি প্রদীপ'কুমার দাস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মাদ'ক নির্মূলের নামে নিজেই বেপরোয়া মা'দক সেবন, মাদকের ব্যবসা করেছে, মানুষ'কে মিথ্যা মা'দকের মা'মলায় ফাঁসিয়েছে, টাকা না দিলে ক্রসফায়ার দিয়েছে। এলাকার নিরীহ মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি করেছে, ভিটেবাড়ি উচ্ছেদ করেছে।
বড় বড় অপ'রাধীদের অপরাধকে ছোট দেখানোর জন্য লাখ লাখ অর্থের লেনদেন করেছেন আবার টাকা না পেলে ছোট অপ'রাধকে বড় করে মা মলা দায়ের করেছেন।
সাংবাদিক ফরিদ বলেন, ধরুন কারো কাছে ইয়াবা পেয়েছে দশ হাজার পিস সেটিকে ২ হাজার পিস দেখানোর জন্য অপ'রাধীর কাছে অর্থ নিয়েছেন আর বাকি ইয়াবা'গুলো তিনি নিজেই বিক্রি করেছেন। আবার কখনো কোন লোকের কাছে দেখা যাচ্ছে, কোন ইয়াবা পাননি তার পকেটে হাজার পিস ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়ে জিম্মি করে ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন।
মূলত এ'সব বিষয় নিয়ে ২০১৯ সালের ২৪ জুন ‘টাকা না দিলে বন্দুক যু'দ্ধ দেন টেকনাফের ওসি’ শিরো'নামে একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করেছিলাম। এটাই আমার জীবনের কাল হয়ে যায়। এ সংবাদ প্রকাশের পর ওসি'প্রদীপ তার থানার সীমানা ডিঙ্গিয়ে কক্সবাজার শহরে আমার বাসায় একের পর এক অ'ভিযান চালায়। নানাভাবে ভয়'ভীতি দেখাতে থাকে। এক'পর্যায়ে তার ভয়ে জানমাল এবং পরিবারের জন্য ভিটে বাড়ি ভাড়া দিয়ে ঢাকা শহরে পালিয়ে যাই। ঢাকায় আসার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র'মন্ত্রী, পু'লিশের আইজিপি এবং আমার গণ'মাধ্যমের বন্ধুদের স্মরণাপন্ন হই।
মন্ত্রী মহোদয় আমাকে সার্বিক নিরাপত্তা দেয়ার জন্য তৎকালীন কক্সবাজারের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন'কে ফোন দেন। কি'ন্তু আমার দুর্ভাগ্য সেদিন এসপি মাসুদ ওসি প্রদীপের সকল কুক'র্মের বিষয়ে অবগত হওয়ার পরও মন্ত্রী মহোদয়কে বলেছিলেন আমি নাকি মাদ'কের ব্যবসা করি, আমি নাকি চলমান মাদক-দুর্নী'তি বিরোধী অ'ভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে সরকারের বি'রুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছি। এভাবে বিভিন্ন'রকম মিথ্যা তথ্য দেন।
নিজের গ্রে'ফতারের বিষয়'টি জানিয়ে তিনি বলেন, এক পর্যায়ে ঢাকা থেকে টেকনাফের পু'লিশ দিয়ে আমাকে ধরে আনা হয়। আমার বি'রুদ্ধে একটা গায়েবি মা'মলা দেখানো হয় যার বাদি আমি চিনি না। ঘটনাস্থল, তারিখ সময় সাক্ষী কোনকিছুরই মিল নেই। এমন একটি মা'মলায় আমাকে ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ গভীর রাতে ঢাকা মিরপুরের বাসা থেকে গ্রে'প্তার করা হয়।
তবে সেদিন আমাকে যারা অ'ভিযান চালিয়ে গ্রে'প্তার করে তাদের পোশাক, অস্ত্রসস্ত্র পু'লিশের মতো হলেও অনেকের নেমপ্লেট ছিল না।
তাদের দেখেও বাংলাদেশের পু'লিশ মনে হয়নি। আমি দীর্ঘ দিন ধরে সাংবাদিকতা করছি, কোন পু'লিশকে কখনো এত খারাপ হতে দেখিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল অর্জনে বাংলাদেশ পু'লিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য কিন্তু সেদিন যারা আমাকে গ্রে'প্তার করেছিল তারা ছিল ওসি প্রদীপের পেশাদার খুনি বাহিনী।
তারা মূলত একটা চাঁদাবাজির মা'মলার ওয়ারেন্টের কথা বলে গ্রে'প্তারি করে। এরপর সারারাত তারা আমাকে বন্দুক'যুদ্ধের নামে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায়। পরে সম্ভবত ঊর্ধতন কর্তৃ'পক্ষের নির্দেশে ক্রসফায়ার না দিয়ে টেকনাফ থা'নায় নিয়ে যায়।
ওসি প্রদীপ কর্তৃক মধ্যযুগীয় নি'র্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরে ফরিদুল বলেন, সকালে ওসি প্রদীপ আমাকে দেখার পর তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। আমার চোখ মুখ বেঁধে ব্যাপক নি'র্যাতন চালানো হয়। ওসি প্রদীপও আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। এ'সময় তারা আমার দুচেখে মরিচের গুড়া দেয় পাশা'পাশি পিন দিয়ে চোখ নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। প্লাস দিয়ে নখ উপড়ে ফেলার চেষ্টা চালায়। হাতে পায়ে এবং মুখে দীর্ঘ সময় মার'ধর করা হয়।
এক পর্যায়ে আমি পানি পানি করে চিল্লাতে লাগলাম, তখন ওসি প্রদীপ প্যান্টের চেন খুলে প্রসাব এবং বাথরুমের মলমূত্র আমার মুখে লাগিয়ে দেয়। এরপর আধামরা অবস্থায়, আমাকে কয়েক'জন মিলে ধরে টেকনাফ মডেল থানার তিন তলায় ঝুলিয়ে রাখা হয়।
ভয়াল দিনটির বর্ণনায় তিনি বলেন, এরপর কিছুক্ষণ আবার আমাকে কুকুরের মত মার'ধর করে গাড়িতে করে টেকনাফ হাস'পাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে জোড় করে মারধর করে একটা ইনজেকশন দেয়া হয়। সেটা আমি প্রথমে দিতে চাইনি, কেননা আমার সন্দেহ হয় এটা পেইন কিলার নাকি স্লো পয়জন।
এরপর পু'লিশ ভ্যানে করে আমাকে সোজা ম্যারিন ডাইভের দিকে নিয়ে যায়। সেদিন বিয়ের বহরের মতো পু'লিশের গাড়ি ছিল পিছনে। তখন গভীর রাত, আমার হাত পেছনে হ্যান্ডকাপ লাগানো আর চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা। তারপর আমাকে গাড়ি থেকে নামানো হয়। মনে হলো আমাকে কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটে নেয়া হচ্ছে। এরপর ওসি প্রদীপ হাটু দিয়ে আমার বুকে আঘাত করে। এরপর সে আমাকে বলে, কালেমা পড়ে নে তোর সময় শেষ। এর'পর আমি ভয়ে কালেমা পড়া শুরু করি।
তখন ওসি প্রদীপ আমার বুকে সজোরে লাথি দেয়। এরপর আবার ঘাড় ধরে গাড়িতে তুলে নেয়। আমি মনে মনে ভাবলাম বিপদ কেটে গেছে, এবার মনে হয় কোর্টে সোপর্দ করবে।
কি'ন্তু তারা সেখান থেকে আমাকে আদর্শ বালিকা ফাজিল মাদ্রাসার পর কবিতা চত্বরে নিয়ে যায়। সেই কবিতা চত্বরে সব সময় অজ্ঞাত লা'শ উদ্ধার হয়। যেটা প্রদীপ বাহিনীর টর্চার সেল। এখানে নিয়ে ফের আমার উপর আরেক দফায় নি'র্যাতন চালানো হয় এবং বন্দুক'যুদ্ধে দেয়ার বিষয়টি বলাবলি করে। কিন্তু উপরের কোন কর্মকর্তার নির্দেশে তারা শেষ পর্যন্ত ক্রসফায়ার দেয়নি। এতে ওসি প্রদীপ খুব রাগান্বিত হয়ে আমার টর্চার করে।
অ'স্ত্র-মা'দক মামলার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, টর্চারের পর কতুবদিয়া আমার বোনের বাসার সামনে নিয়ে যায়। এখানে আমার বোনের বাসায় আমি কিছু'দিন আশ্রয় নিয়ে ছিলাম। তারা সেখানে দরজায় নক করে। এরপর আমি আমার বোনের কান্নার আওয়াজ পাই।
তখন আমি গাড়ি থেকে চিৎকার করে বলি, আমার মা-বোন কোন অপ'রাধ করেনি তাদের যেন কোন ক্ষতি না হয়, তাদের কোন কান্নার আওয়াজ যেন আমি না পাই। কিছুক্ষণ পর হুট দেশীয় বন্দুক ছয় রাউন্ড কার্তুজ, মদ, গাঁজা'সহ তারা উল্লাস করে। তখন সম্ভবত ভোর এরপর তারা আমাকে নিয়ে শহরের দিকে রওনা করে। এরপর তারা আমাকে সদর হাস'পাতালে নিয়ে আসে। সেখানে নামমাত্র চিকিৎসা দিয়ে আমাকে আবার থা'নায় নেয়া হয়। এর পরের ঘটনা কমবেশি সবারই জানা।
জেল থেকে শুন্য হাতে বেরিয়ে তিন সন্তান-স্ত্রী' নিয়ে ফরিদ মোস্তফার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। কোথায় থাকবেন? কিভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে টেনশনের কথা জানান তিনি। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ কাউকে না কাউকে উছিলা হিসেবে প্রেরণ করেন। আমার জন্য আপনারা যা করেছেন তা কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে।
আমি কতটা অ'সুস্থ তা ভাষায় বোঝাতে পারবোনা। শারীরিক মানুষিক চতুর্মূখী অসুস্থতা, অভাব অনটন ও টেনশন আমাকে ঘিরে ধরেছে।
পু'লিশ আমাকে যেভাবে দাগী বানিয়েছে তাতে মনে হয় কক্সবাজারে আমাকে কেউ ঘর ভাড়াও দেবেনা। আমি এখন গৃহহীন। মাননীয় প্রধান'মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমার ব্যাপারে যেন সুদৃষ্টি দেন। যাতে আমার মামলা এবং শারীরিক চিকি'ৎসায় সরকার হস্তক্ষেপ করেন। পাশা'পাশি ওসি প্রদীপের মতো যারা অত্যাচারী পু'লিশ কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের দৃষ্টান্ত'মূলক শা'স্তি হওয়া প্রয়োজন।
0 মন্তব্যসমূহ